Litigation

অস্তিত্ব রক্ষার প্রত্যয়ে এবং সম-অধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
আয়োজিত
ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী
মহাসমাবেশে গৃহীত
জাতীয় ঐকমত্যের
দাবিনামা
৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা
ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতিনির্বিশেষে আপামর জনগণের মিলিত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের ¯^াধীনতা। এ ¯^াধীনতা অর্জনে এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের অবদান, আত্মত্যাগ কারো চেয়ে কম নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে এরা। পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯টি আসনের মধ্যে ৭২টি আসন এবং সে সময়কালের আতাউর রহমান খান ও আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভার ১০ জনের মধ্যে

৪ জন সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকা সত্বেও রাজনীতির বৃহত্তর ¯^ার্থে তৎকালীন সংখ্যালঘু নেতৃত্ব-ই পৃথক নির্বাচনের বিপরীতে যুক্ত নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করেছিলেন, যা ১৯৫৬-তে পাকিস্তান গণপরিষদে গৃহীত হয়। এই যুক্ত নির্বাচনের  ভিত্তিতে ১৯৭০-র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, যা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি।

কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, সীমাহীন আত্মত্যাগ সত্বেও আজ ¯^াধীনতার ৪৪ বছর পরও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সীমাহীন বঞ্চনা, বৈষম্য, নিগৃহণ, নিপীড়নের শিকার। রাজনীতির মাঠে তারা ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে রাজনৈতিক দলগুলোতে যেমন তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই, তেমনি কোন প্রতিনিধিত্ব নেই সরকারে, সংসদে, রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণে, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায়। বর্তমান মন্ত্রীপরিষদে একজনও পূর্ণমন্ত্রী নেই। ৩০০টি সংসদীয় আসনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৭, সংর¶িত ৫০টি মহিলা আসনে মাত্র ১ জন। মোদ্দা কথা, রাজনৈতিক ¶মতার বাতাবরণ থেকে সংখ্যালঘুদের অনেক দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে, হচ্ছে।

শুধু কি তাই, অসহায় বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুদীর্ঘকালের অব্যাহত আন্দোলন, সংগ্রামের ফলশ্র“তিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে, নিবন্ধন আইনের ¶েত্রে বৈষম্য দূরীকরণে, হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের অধিকার র¶ায় হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হলেও তা আজো যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। মহলবিশেষ অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। এসব সংখ্যালঘু ¯^ার্থবান্ধব আইনের সুফল যাতে ভুক্তভোগীরা পেতে না পারে তার জন্যে চক্রান্ত চলছে নানাভাবে, নানা কৌশলে। অবর্ণনীয় হয়রানির মুখোমুখি করা হচ্ছে তাদের।

অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশ আজো সা¤প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বৈষম্যমুক্ত হতে পারে নি। সা¤প্রদায়িকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে এখনো সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসতে পারেনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। রাষ্ট্রধর্ম আজো বহাল রয়েছে। ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকারের ¯^ীকৃতি মেলেনি। মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ সর্বত্র মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। পাকিস্তানি আমলের মতো একই কায়দায় ধর্মীয়-জাতিগত ও আদিবাসী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর দৈহিক নির্যাতন-ই শুধু নয়, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মঠ-মন্দির-গির্জার ওপরও হামলা চলছে। বেশিরভাগ হামলা চলছে ঠিক একাত্তরের মতো সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে। নারীদের ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এর পেছনে যে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে তা হলো বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করা, আবহমানকালের বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা। অথচ নির্বিকার সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল। নাগরিক সমাজও তেমন সোচ্চার নয়। হরিজন, দলিত জনগোষ্ঠী, ঋষি ও চা বাগান শ্রমিকদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।

ধর্মীয় বৈষম্য নিরসনে খানিকটা উদ্যোগ বিগত কয়েক বছরে দেখা গেলেও তা এখনো যথাযথ নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে সংখ্যাগুর“ স¤প্রদায়ের জন্যে মাথাপিছু বরাদ্দ যেখানে ১১ টাকা, সেখানে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জন্যে মাত্র ৩ টাকা, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকারের চেতনাকে খর্ব করে। বিগত ৭ দশকেরও ঊর্ধ্বকাল ধরে অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য, বঞ্চনা, অবহেলার শিকার হয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আজ অগ্রসর জনগোষ্ঠী থেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তাদের উন্নয়নে জাতীয় রাজ¯^ বাজেট থেকে কোন বরাদ্দ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের কথিত কল্যাণের নামে গঠিত ট্রাস্টসমূহ চলে ব্যাংকের আমানতের সামান্য সুদের টাকায়। অথচ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কল্যাণের জন্যে গঠিত ফাউন্ডেশনের বরাদ্দ আসে প্রতিবছর জাতীয় রাজ¯^ বাজেট থেকে। ধর্মশি¶া বাধ্যতামূলক হলেও ইসলাম ধর্ম ভিন্ন অপরাপর ধর্মের শি¶ার জন্যে আজও দেশের বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শি¶কের নিয়োগ নেই। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ¶েত্রে কিছুটা অগ্রগতি ঘটলেও জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নিয়োগ, পদোন্নতিতে দৃশ্যমান উদ্যোগ আজো দেখা যাচ্ছে না। সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ নেই বললেই চলে।

পাকিস্তানি আমলের মতো ¯^াধীন বাংলাদেশেও নিঃ¯^করণ প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব আজ বহুমুখী সংকটের মুখোমুখি। সরকারি পরিসংখ্যানমতে, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ১৯৪৭-র ২৯.৭% থেকে ২০১১ সালে ৯.৭%-এ নেমে এসেছে। অথচ ৭১-এর প্রাক্কালে তা ছিল ২০%-র উপরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হার ৯৮.৬% থেকে বর্তমানে আনুমানিক ৪৮%-এ ঠেকেছে অর্থাৎ তারা নিজ বাসভূমিতে সংখ্যাগুর“ থেকে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। উপ-মহাদেশীয় রাজনীতিতে ‘দেশত্যাগ’-র বিষয়টি বড় ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে। সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ¯^ার্থ, অধিকার, নিরাপত্তা সর্বোপরি অস্তিত্ব নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করছে এ অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা।

এ প্রে¶াপটে আপামর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের অস্তিত্বের সংকট থেকে উত্তরণ, সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং ¶মতায়ণের জোর তাগিদ অনুভব করছে। এ তাগিদবোধ থেকে এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত ও সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সকল সংগঠনের প¶ থেকে সর্বসম্মতক্রমে দেশ ও জাতির সামনে জাতীয় ঐকমত্যের ৭ দফা দাবিনামা উত্থাপিত হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নাগরিক শক্তিসমূহ এ দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।

 

জাতীয় ঐকমত্যের ৭ দফা দাবিনামা

১.       ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্বশীলতা

(ক) জাতীয় সংসদে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যথাযথ অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ল¶ে যুক্ত নির্বাচনের (সার্বজনীন ভোটের) ভিত্তিতে ২০% হারে (৭০-র জনসংখ্যা অনুসারে) ৬০টি আসন সংর¶ণ করতে হবে। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায়ও অনুরূপ পদ¶েপ গ্রহণ করতে হবে।

(খ) সাংবিধানিক পদসহ প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বস্তরে, পররাষ্ট্র, পুলিশ ও প্রতির¶া বাহিনীসহ সরকারি চাকরির সকল স্তরে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ন্যুনতম ২০% পদায়ন সুনিশ্চিত করতে হবে।

(গ) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ¶মতায়ণ নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ল¶ে দেশের সব রাজনৈতিক দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অন্যুন ২০% হারে সংখ্যালঘু-আদিবাসীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে।

২.       সাংবিধানিক বৈষম্য বিলোপকরণ

(ক) রাষ্ট্রীয় অন্যতম মূলনীতি ‘ধর্মনিরপে¶তা’ সম্পর্কীয় সংবিধানের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক ২ক অনুচ্ছেদের বিলোপ করে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌল আদলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মনিরপে¶ নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

(খ) আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকারের ও পরিচয়ের ¯^ীকৃতি দিতে হবে।

(গ) ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক র¶াকবচ (ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হধষ ঝধভবমঁধৎফ) সম্বলিত অনুচ্ছেদ সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।

৩.      সম-অধিকার ও সমমর্যাদা

(ক) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও সমতলের আদিবাসীদের কল্যাণে ও উন্নয়নে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।

(খ) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণে জাতীয় রাজ¯^ বাজেট থেকে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদান করে বিদ্যমান কল্যাণ ট্রাস্টসমূহকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করতে হবে এবং অনুরূপভাবে আদিবাসীদের জন্যও পৃথক ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে।

(গ) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের মানবাধিকার সুর¶ায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে।

(ঘ) সংসদ অধিবেশন, মন্ত্রীপরিষদের শপথ গ্রহণসহ রাষ্ট্রীয় সকল কর্মসূচি শুর“র পূর্বে সকল ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।

(ঙ) ’৪৭ থেকে এ পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে দেশের সংখ্যালঘু-আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমানহারে হ্রাসের কারণ নির্ণয়নে ও তা রোধে সুপারিশ প্রদানের নিমিত্তে সংসদীয় কমিশন গঠন করতে হবে।

(চ) আদিবাসী ককাসের অনুরূপ ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাস গঠনে উদ্যোগ নিতে হবে।

(ছ) সকল ধর্ম ও স¤প্রদায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংর¶ণ করতে হবে।

৪.       স্বার্থবান্ধব আইন বাস্তবায়ন ও প্রণয়ন

(ক) পার্বত্য শান্তিচুক্তির দ্র“ত বাস্তবায়নসহ এ চুক্তির আলোকে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে অনতিবিলম্বে তা কার্যকর করতে হবে।

(খ) সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যার নিশ্চিত সমাধানের নিমিত্তে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করে তাদের ভূমির অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

(গ) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ¯^ার্থবান্ধব অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, দানের ঘোষণা সম্বলিত নিবন্ধন আইন ও হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের দ্র“ত বাস্তবায়ন করতে হবে।

(ঘ) দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে;

(ঙ) অধিকতর অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হরিজন, দলিত, ঋষি স¤প্রদায় এবং অবহেলিত চা-শ্রমিকদের পেশা ও ভূমির অধিকারসহ তথা সামগ্রিক কল্যাণে সকল প্রকারের সামাজিক বৈষম্য নিরসনে বিশেষ আইন প্রণয়নসহ নানাবিধ কার্যকরী পদ¶েপ গ্রহণ করতে হবে ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে শি¶িত হরিজন, দলিত, ঋষি জনগোষ্ঠীর শি¶াগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি কোটার মাধ্যমে নিয়োগের নিমিত্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫.       শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য নিরসন

(ক) জাতীয় স্কুল টেক্সট বুক বোর্ড প্রণীত ও অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকে দেশের সকল ধর্ম ও জাতিসত্বার সম-মর্যাদার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

(খ) দেশের সকল বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মশি¶ার পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ অপরাপর ধর্মীয় স¤প্রদায়ের ধর্মজ্ঞ শি¶ক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সকল পর্যায়ের ধর্মশি¶কের ¶েত্রে বেতন বৈষম্যের অবসান করতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে, অনুদানে ও পরিচালনায় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সকল ধর্মের ধর্মীয় শি¶ায়তন চালু করতে হবে। সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ধর্মশি¶ার বিদ্যমান শি¶ায়তনগুলোকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে।

৬.       দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ

(ক) ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর হামলার ¶েত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের ল¶্যে সংখ্যালঘু সুর¶া আইন প্রণয়ন করতে হবে।

(খ) সংখ্যালঘু সুর¶াজনিত আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত দ্র“ত বিচার আইন ও সন্ত্রাস দমন আইনে শাস্তির বিধান বাড়িয়ে সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের দ্র“ততম সময়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ¶মতা আইন প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে হবে।

(গ) ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে সংঘটিত সা¤প্রদায়িক সহিংস ঘটনাবলীর বিষয়ে গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশন রিপোর্টের সুপারিশমালার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

(ঘ) সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসরোধে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৭.       মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সা¤প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ

যে কোন ধরনের সা¤প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, বর্ণবৈষম্য ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করতে হবে।

যথাযথ স্বামতায়ণ ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণসহ উলে­খিত দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করা না হলে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতে ভিন্ন চিন্তা করতে বাধ্য হবে, যা কারও কাছে কাম্য নয়।