All News General News

রামশংকরের মন্দির’ শ্রীমঙ্গলে হিন্দুদের দেবত্তোর সম্পত্তি দখল ও মন্দির ভাংচুর

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মুসলিম প্রভাবশালী কর্তৃক হিন্দুদের দেবত্তোর সম্পত্তি দখল ও মন্দির ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। মন্দির ভাঙ্গন এবং দেবত্ব সম্পত্তি দখল করায় স্থানীয় হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করা হয়েছে। এতে এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে তীব্র চাপা ােভ ও প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। এদিকে ঘটনার পর বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার বাদি হয়ে শ্রীমঙ্গর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রিভিশনাল সেটেলমেন্ট অনুযায়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবট মৌজার জেএল নং ৫ এর ৭৪ নং খতিয়ানের ৯৯৩ নং দাগে ২ শতক ভূমিতে শ্রীশ্রী দামোদর বিগ্রহ দেবতার নামে রেকর্ডকৃত রয়েছে। সেই সময়ের জমিদার রামশংকরের তালুক উক্ত ভুমিটি মন্দিরের জন্য দান করেন। ভূমি দাতার নামানুসারে এখানে নির্মিত মন্দিরের নাম হয়ে উঠে ‘রামশংকরের মন্দির’। মন্দিরটিতে এক সময় প্রতি বছর তিথি অনুযায়ি পূজার্চনা করা হত। পর্যায়ক্রমে রজনী চৌধুরী ও তার ছেলে মানিক চৌধুরী, কানু চৌধুরী ছিলেন এই মন্দিরের সেবায়িত। কালের বিবর্তনে গত কয়েক দশকে মন্দিরটিতে তেমন কোন পূজার্চনা হতে দেখা যায়নি। ফলে ধীর্ঘদিন ধরেই মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। মাঝে মধ্যে দূর দুরান্তের সাধু-সন্ন্যাসীরা এখানে আসতেন এবং রাত্রিযাপন করতেন। মন্দিরটিকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সহসাই একটি প্রভাবশালীচক্র মন্দিরের ভূমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ভূমির ওপরে মন্দির থাকা অবস্থায় ভূমিটি দখলে নেয়া যাবেনা ভেবে সহসাই লোকচুর অন্তরালে মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।
এলাকাবাসী আরো জানায়, মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামের বাসিন্দা মৃত. লেচু মিয়ার ছেলে মো. ছুফি মিয়া (৪৫) ও তার সহকর্মীরা এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি বিরাজ করে আসছে। এমনকি অন্যের জমি ভোগদখল ও নানাবিধ অবৈধ অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এমনি এক ঘটনায় গত ১৪ ফেব্র“য়ারি মঙ্গলবার মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবট এলাকায় প্রায় পাঁচশত বছরের পুরাতন স্থাপত্যকীর্তি রামশংকরের মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলে ওই দেবস্থলীর ভূমি দখলে নিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের নিমিত্তে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি শনিবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরটি একেবারে গুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পাশেই সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। সীমানা প্রাচীরের কাজে গাঁথুনী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মন্দিরের ইট সুরকি জড় করা হয়েছে। পাশের একটি ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে এই নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্দিরের পাশ কেঁটে তৈরী করা হয়েছে বিরাট পুকুর। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার একই গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী নূর উদ্দিন (৪২) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ছুফি মিয়ার নির্দেশে দেবমন্দিরের সুরকি ভেঙ্গে বাউন্ডারী ওয়ালের কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরী করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মো. ছুফি মিয়া জানান, প্রায় ৪০/৪৫ বছর আগে মন্দিরের সেবায়িত রজনী চৌধুরী ছেলে মানিক চৌধুরী ও কানু চৌধুরী মন্দিরের পাশে ১ একর ৩৩ শতক ভূমি ছুফি মিয়ার পিতা মো. লেচু মিয়ার নিকট বিক্রি করে ভারতে চলে যান। তবে পিতার ক্রয়কৃত ওই ভূমির মধ্যে মন্দিরের নামে উল্লেখিত ভূমিটি ছিল কিনা প্রশ্নের জবাব ছুফি মিয়া কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি। দেবত্তোর সম্পত্তি দখল করেন নি মর্মে মো. ছুফি মিয়া আরো জানান, প্রায় ৪/৫ বছর আগে মন্দিরটির মাথা ভেঙ্গে গিয়ে মন্দিরের গায়ে একটি বটগাছ ঝুঁপরি বাঁধে। পরে স্থানীয় কতেক হিন্দু লোকের অনুমতিক্রমে তিনি পুরো মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের মির্জাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মন্দির ভাঙ্গার বিষয়ে আমরা মোটেই অবগত নই। তাছাড়া মন্দিরটিকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে গুপ্তধন লুন্ঠনের আশায় একটি কুচক্রি মহল দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের ভূমি দখলে নেয়ার পায়তারা করছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, “মন্দির ভাঙ্গা কিংবা মন্দিরের জমি দখলে নেয়ার প্েয আমি নাই। মন্দির ভাঙ্গার আগে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করার জন্য আমি ছুফি মিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলাম।” তাছাড়া মন্দিরের ভূমির মলিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, “সেটেলমেন্টের জরিপে যদি ভূমিটি ছুফি মিয়ার মালিকানায় না আসে তাহলে ভূমির মালিকানা ছেড়ে দেয়া উচিৎ।”
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার বলেন, “একটি মন্দিরের সেবায়িত কখনো মন্দিরের ভূমি বিক্রি করতে পারেন না। মো. ছুফি মিয়া মন্দিরের ভূমি বিক্রেতা হিসেবে রজনী চৌধুরী ছেলে মানিক চৌধুরী ও কানু চৌধুরীর নাম বলে নিজের কথায় নিজেই আটকা পড়েছেন।” তাছাড়া মন্দিরর ভূমি দখল ও মন্দির ভাংচুর করার ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। তিনি এরকম অপরাধকারী চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি শনিবার রাতে মো. ছুফি মিয়া ও তার সহযোগী পার্শ্ববর্ত্তী ছাত্রাবট গ্রামের বাসিন্দা মৃত. মজমিল মিয়ার ছেলে জাপান মিয়া (৫২), মৃত. আমজদ মিয়ার ছেলে লুতু মিয়া (৩২), শহরশ্রী গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে ছুবহান মিয়া (৩৬) সহ অজ্ঞাত আরো ১৫/১৬ জনকে আসামী করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি অভিযোগ আনেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ এই প্রতিবেদককে জানান, “স¤প্রতি মির্জাপুর ইউনিয়নে ভূমি দখলদারিত্ব বেড়ে গেছে। গত ১৭ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার দেবত্তোর সম্পত্তি দখল ও মন্দির ভাঙ্গার খবরটি পেয়েই আমি দ্রুত তদন্তের জন্য ওইদিন রাতেই থানার এসআই মারুফ আহম্মদকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য নির্দেশ দেই। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, “ভূমিটি সত্যিকার অর্থে মন্দিরের নামে উৎসর্গিত কিনা তা যাচাই করতে হবে।” তাছাড়া মন্দির ভাঙ্গনের বিষয়ে তিনি বলেন, “সেখানে আদৌ কোন মন্দির ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।” তবে সত্যিকার অর্থে যদি সেখানে কোন মন্দিরের অবস্থান থাকে তাহলে অভিযুক্তদের প্রতি অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।