All News General News Press Conference/ Press Realese Religion & discussion

ধর্মীয় ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার : স্টিফেন হকেন


নিজস্ব বার্তা পরিবেশক।। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) কমিশনার স্টিফেন হকেন বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের মানুষের অবিচল আস্থা তাঁকে অভিভূত করে। তিনি জানেন, কী অপরিসীম দুর্দশা ও ত্যাগস্বীকার বাংলাদেশের মানুষকে করতে হয়েছিল। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ভূমিকাকে গৌরবোজ্জ্বল হিসেবে অভিহিত করেন।

মি. হকেনের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদল বুধবার (১৬ নভেম্বর) বেলা ২টায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন এবং প্রায় ঘন্টাব্যাপী পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিশেষ করে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের অবস্থা ও অধিকার বিষয়ে মত বিনিময় করেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সুপারভাইজিং পলিসি এনালিস্ট কুর্ট ওয়ার্থমুলার, পলিসি এনালিস্ট প্যাট্রিক গ্রীনওয়াল্ট ও ডেপুটি রিজিওনাল রিফিউজি কো-অর্ডিনেটর টম ব্রাউনস।

প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রানা দাশগুপ্ত। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে এ পর্যন্ত সময়কালে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ থেকে অব্যাহতভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যে দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক জনসংখ্যার হার থেকে তা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হবে। তিনি বলেন, নানা মাত্রায় ধর্মীয় বঞ্চনা, বৈষম্য, নিপীড়ন, নিগৃহণ আজও চলছে। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদিতা, ধর্মান্ধতার ক্রমবর্ধমান উত্থানে সংখ্যালঘুরা তাদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত। রাষ্ট্রধর্ম শুধু ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিসত্ত্বায় বিভাজন টানেনি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। রাজনীতি ও রাষ্ট্রচর্চায় ধর্মের অপব্যবহার সাম্প্রদায়িকতাকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিয়েছে। আগামি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘুরা তাদের জীবন, সম্পদ ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে দু’জন সিনেটরের সিনেটে বিল উত্থাপনে তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান।

কমিশনার স্টিফেন হকেন তাঁর বক্তব্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশে এর উন্নয়নে অগ্রণী ও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য ঐক্য পরিষদকে ধন্যবাদ জানান। মি. হকেন আরও বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গভীর আগ্রহ রয়েছে।

এরপর উভয় পক্ষ প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনায় অংশ নেন। এতে পরিষদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, মিলন কান্তি দত্ত, জে এল ভৌমিক, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, রঞ্জন কর্মকার, মনীন্দ্র কুমার নাথ, নির্মল চ্যাটার্জী প্রমুখ।

আলোচনায় এ মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, আগামি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মনিরপেক্ষতার মৌলনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গিকারাবদ্ধ হবে।